আজকে বাংলাদেশে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ১৯৭১ সালের এই দিনেই দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আল-বদর রা মিলে পরিকল্পনা করে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।
আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী হানাদা বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম হয়।
১৪ ই ডিসেম্বর দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় ভাবে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
কিন্তু এবার করোনার কারনে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় ও কালো পতাকা অর্ধেক নামিয়ে করন, মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ও রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে পুষ্প নিবেদন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা অর্পণ।
১৪ ই ডিসেম্বর উপলক্ষ্যে করোনা মহামারি পরিস্থিতির মধ্যে সোমবার সকাল ৭টা ১০ মিনিটে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামিম উজ জামান
এবং
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে আজ সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ আর রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে।
শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শহীদ পরিবারের সন্তান সহ, বিভিন্ন রাজনৈতিক, ছাত্রযুব, পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা।
২৬ মার্চের মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা;-
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী
তবে বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা আজ পর্যন্ত নির্ণয় করা যায় নি। তবে ১৯৭২ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এদের মধ্যে ৯৯১ জন ছিলেন শিক্ষাবিদ,
৪৯ জন চিকিৎসক,
৪২ জন আইনজীবী
এবং
১৬ জন সাহিত্যিক,
শিল্পী ও প্রকৌশলী।
ঢাকা বিভাগে বুদ্ধিজীবী নিধনের এ তালিকায় ২০২ জন শিক্ষক ও ১০ জন আইনজীবীকে হত্যা করা হয়। আর চট্টগ্রাম বিভাগে ২২৪ জন শিক্ষক ও ১০ জন আইনজীবীকে হত্যা করা হয়।
অন্যদিকে খুলনা বিভাগে ২৮০ জন শিক্ষক ও ছয়জন আইনজীবীকে হত্যা করা হয়।
সবশেষ
রাজশাহী বিভাগে ২৬২ জন শিক্ষক ও ১৫ জন আইনজীবীকে হত্যা করা হয়।
আজ সোমবার সকাল ৮ টায় রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানায় যে, আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর, রাজাকার, আলবদর, আলশামস রা যখন নিশ্চিত হয়েছিল পরাজয়ের, যখন তাদের কাছে বিকল্প কোনো পথ ছিল না,
তখন তারা জাতিকে মেধাশূন্য করতে পরিকল্পিতভাবে তালিকা করে বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে নির্মমভাবে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আরো বলেন,
আজকে মৌলবাদী গোষ্ঠী পবিত্র ইসলাম ধর্মকে কলঙ্কিত করে ধর্মের নামে মিথ্যাচার করছে।
আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছরের প্রাক্কালে মৌলবাদী গোষ্ঠী আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে অশনি সংকেত।
তাদের শেকড় অনেক গভীরে, তাদের সহজে উপড়ে ফেলা যাবে না।
তবে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ মৌলবাদী শক্তিকে উপড়ে ফেলতে জাতি ঐক্যবদ্ধ।